কে এই ফিরোজ হাসান - Free Motion by Firoz Hasan

Free Motion by Firoz Hasan - কোন অসহায় মানুষের সামনে এসে হঠাৎ করেই একটি বাইক থামে। তারপর সেই অসহায় মানুষটির সাথে প্রথমে সালাম দিয়ে হাসির ছলে মিষ্টি ভাষায় আন্তরিকতার সাথে কথা বলা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার হাতে তুলে দেন নগদ টাকা কিংবা কোনো উপহার। আর এই পুরো ব্যাপারটি তিনি ভিডিও ধারণ করে ফেসবুক-ইউটিউব শেয়ার করে থাকেন।

কে এই ফিরোজ হাসান

সেই ভিডিও গুলোতে দেখা যায় বাইক নিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় মাঝপথে দাঁড়িয়ে তিনি পথশিশুদের কাছ থেকে ফুল কিনছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ১০ টাকা কিংবা ২০ টাকা মূল্যের সেই ফুলের বিনিময় মানিব্যাগ থেকে বের করে দিচ্ছেন ৫০০-১০০০ টাকার কয়েকটি নোট। কখনো বা আবার রাস্তার ফুটপাতে অল্প পুজি নিয়ে বিক্রয় করতে বসা কোন ব্যক্তি থেকে সব গুলোই কোন প্রয়োজন না থাকা সত্তেও কেনার ছলে তার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন কয়েক হাজার টাকা। 
 
আবার কখনো দেখা যায় গরীব-দুস্থদের সঙ্গে নিয়ে দোকান থেকে কিনে দিচ্ছেন চাল ডাল পিঁয়াজ সহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য। কিনে দিচ্ছেন জামাকাপড় বই ঐষধ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আবার কাউকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কিংবা ব্যবসায়কে বড় করার জন্য হাতে তুলে দিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। 

এখানে অবাক করার বিষয় হলো সাহায্য করার সময় একবারের জন্যও দেখা যায়না দান করা সেই মানুষটির চেহারা। নিজের মুখেও কখনো তার পরিচয় তুলে আনেন না। কারণ তার উদ্দেশ্য আত্মপ্রচার করা নয়। তার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। 
 
পর্দার আড়ালে থেকে নীরবে-নিভৃতে অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানো এই মানুষটির নাম ফিরোজ হাসান। অবশ্য ফিরোজ হাসান নামে তাকে খুব কম মানুষই চিনেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে তিনি Free Motion নামে অধিক পরিচিত। তিনি সোস্যাল সাইটগুলোতে এত পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও খুব অল্প সংখ্যক মানুষ আছেন যারা তার চেহারা দেখেছেন। কতটা উদার মনের মানুষ হলে এভাবে দিনের পর দিন নিজেকে আড়ালে রেখে অসহায় মানুষদের সাহায্য করে যাচ্ছেন। 

ফিরোজ হাসান ছোটবেলা থেকেই ভ্রমন করতে খুব পছন্দ করতেন। আপাদমস্তক একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ তিনি। বাইক নিয়ে ছুটে চলেন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। ভ্রমণ কালে আশেপাশের বিভিন্ন মনোরম দৃশ্য ভিডিও করে তা আপলোড দিতেন ফেসবুকে ইউটিউবে। আর আসা যাওয়ার মাঝে কোন গরীব পথচারী পথশিশু কিংবা সুবিধাবঞ্চিত কোন মানুষ চোখে পড়লে তাদের সাহায্য করতেন নিজের বিবেক বোধ থেকেই। 
 
মানবিক চেতনা থেকে অসহায়দের পাশে আগে থেকেই দাঁড়ালেও প্রথম দিকে ভিডিও করার কোন ইচ্ছা ছিল না। এরপর ভাবলেন যদি এই কাজগুলো ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয় তাহলে হয়তো তা অনেকেই দেখে উৎসাহিত হতে পারে এবং এই ধরনের আরও মহৎ কাজ করতে পারে। সেই থেকে ফিরোজ হোসেন অসহায়দের সাহায্য করার দৃশ্যগুলো ভিডিও ধারণ করা শুরু করেন।  

যার শুরুটা হয়েছিল 2020 সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। তার ভিডিও তৈরির উদ্দেশ্য লোক দেখানো নয় বরং মানবিক কাজে মানুষকে উৎসাহিত করা। তবে তিনি সব সময় ক্যামেরার পেছনে থাকেন। তাই খুব কম মানুষেরই তার চেহারা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। এমনকি কোন ভক্তের সেলফির আবদার মেটাতে চাইলে খুলতে চান না তার মাথার হেলমেট। 

ফিরোজ হাসান বলেন যখন কোন অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে পারি তখন তাদের মুখের হাসি আমাকে অন্যরকম এক প্রশান্তি দেয়।এর কোন বিনিময় হয়না। আমি যতটুকু পারি সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষকে সহযোগিতা করি তাছাড়া ভিডিওর মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাজ করতে পারায় মহান আল্লাহর কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া আদায় করেন তিনি। সেই সাথে মা-বাবার প্রতি ও কৃতজ্ঞতা করেছেন। তারা ছোটবেলা থেকেই এমন সুশিক্ষা ও আদর্শ দিয়ে বড় করেছেন বলেই তিনি আজ মানবিক কাজ করতে পারছেন।

তার মতো আরও অসংখ্য তরুণ সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয় নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আত্মপ্রচার নয় বরং আত্মতৃপ্তি সাথে মূল উদ্দেশ্য। 

ফিরোজ হাসান বিশ্বাস করেন সবাই নিজের অবস্থান থেকে এভাবে মানুষের পাশে থাকলে একদিন সমাজ থেকে সকল ধরনের দরিদ্রতা এবং অসহায়ত্ব দূর হবে। মহান আল্লাহর কাছে এই মহৎ ভাইটির জন্য দোয়া কামনা করছি। আল্লাহতায়ালা যেন তাকে এভাবে সারা জীবন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেন এবং তাকে নেক হায়াত দান করেন। আমীন

মানবতার ফেরিওয়ালা এই ফিরোজ হাসানের জন্ম চাঁদপুরে। তিনি এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেছেন চাঁদপুর থেকে পড়ে ঢাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url